বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। কিন্তু উন্নয়নশীল হলেও লোডশেডিং আমাদের নিত্য সঙ্গী। এর ধেকে কোনো নিস্তার নেই। তাই যাদের সাধ্য আছে তারা আইপিএস ব্যবহার করেন কিন্তু যাদের নেই তারা কি ব্যবহার করবেন। আর গরমের দিন আসলে তো কোনো কথাই নেই। সাধারণ মানুষ বিশেষ করে যাদের আইপিএস কিংবা জেনারেটর নেই তারা কিভাবে গরম থেকে রক্ষা পাবেন সেটিই চিন্তার বিষয়। কিন্তু যদি এমন হয় জ্বলবে মোমবাতি আর সাথে চলবে ফ্যান তবে কেমন হয়? চোখ কপালে উঠার মত ব্যাপার!
সে অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রকৌশল চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী দীপ্ত সরকার। তার উদ্ভাবিত প্রযুক্তিতে মোমবাতি আলো ছড়ানোর পাশাপাশি চালাবে পাখাও। কাচের চেম্বারে মোমবাতির রাখার দুই মিনিটের মধ্যে ঘুরে উঠবে পাখা। এটি একনাগাড়ে ১০ হাজার ঘণ্টা পর্যন্ত চলবে।সম্প্রতি ‘ডিজাইন অ্যান্ড ফেবরিকেশন অব এ টার্মোইলেক্ট্রিক জেনারেটর পাওয়ারড বাই ক্যান্ডেললাইট’ শিরোনামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেন দীপ্ত সরকার।
তিনি বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত বিদ্যুতের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু দেশের ক্রমবর্ধমান চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিদ্যুৎ যোগান দেওয়া কোনভাবে সম্ভব হচ্ছে না। ফলে প্রতিনিয়ত লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণায় ভুগছে লোকজন। এ যন্ত্রণা থেকে নিস্তার পেতে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তরা জেনারেটর বা আইপিএসের উপর নির্ভর করে। কিন্তু গরমের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পান না নিম্নমধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত লোকজন। কারণ জেনারেটর কিংবা আইপিএস কেনার সামর্থ্য তাদের অনেকেরই নেই। নিম্নমধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত লোকজনের কথা চিন্তা করে বিকল্প বিদ্যুৎ উৎসের চিন্তা করতে থাকি। একপর্যায়ে মোমবাতির তাপ শক্তি দিয়ে ফ্যান চালানোর পরিকল্পনাটি মাথায় আসে।
দীপ্ত সরকার বলেন, বিদ্যুৎ বিভ্রাট হলেই আমরা মোমবাতি ব্যবহার করি। মোমবাতি থেকে আলো ও তাপ দুটোই আমরা পেয়ে থাকি। কিন্তু আলো ব্যবহার করলেও তাপ শক্তি কোন কাজে লাগানো হয় না। থার্মোইলেক্ট্রিক যন্ত্রের মাধ্যমে এ তাপ শক্তি দিয়ে ছোট আকারের একটি ফ্যান চালানো সম্ভব। তিনি বলেন,বাণিজ্যিকভাবে এটি উৎপাদনে খরচ পড়বে মাত্র দেড় হাজার টাকা। থার্মোইলেক্ট্রিক যন্ত্র দিয়ে টানা ১০ হাজার ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। এক টুকরো কাঠ, একটি কাচের বাক্স, একটি থার্মোইলেকট্রিক কুলার, বেশ কিছু অ্যালুমিনিয়ামের পাত, একটি ফ্যান, একটি ইলেকট্রিক মোটর ও লোহারপাত দিয়ে এটি তৈরি করা যাবে বলে জানান তিনি।
প্রকল্পটির তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রকৌশল বিভাগের সহকারি অধ্যাপক সানাউল বারী। তিনি বলেন, দেশে যে হারে লোডশেডিং হয় তার উদ্ভাবিত প্রযুক্তিটি খুবই কাজে আসবে। কারণ এটির লাইফ টাইম প্রায় ১০ হাজার ঘণ্টা। প্রকল্পটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসলে প্রযুক্তিটি স্বল্প খরচে বাণিজ্যিভাবে তৈরি করা সম্ভব। তখন এটি আরো মোডিফাই করা যাবে।
তিনি বলেন, কনসেপ্টটি অনেক আগের হলেও ব্যবহারিকভাবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এ প্রথম বাস্তবায়ন করেছে দীপ্ত সরকার। সম্ভবত দেশেও প্রথম। এর আগে অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে বাস্তবায়ন হয়েছে কি না তা আমার জানা নেই ।